একজন নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা কোন কোম্পানীর শেয়ার কেনার আগে ঐ কোম্পানীর ফান্ডামেন্টাল বা মৌল ভিত্তি তথা অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী।
ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস বা মৌলিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে মূলত একটি কোম্পানীর ব্যালেন্স শীট, ক্যাশ ফ্লো, প্রফিট এন্ড লস স্টেট্মেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে কোম্পানীটি ভাল না খারাপ সে বিষয়ে একটি সম্যক ধারনা প্রদান করে।
এছাড়া দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা অথবা বাজারে সরবরাহ এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের ভিত্তি পরিবর্তিত হতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক ও সার্বিক অবস্থা ভাল থাকলে তা দেশের স্থানীয় কোম্পানী গুলোর দামকে প্রভাবিত করে যার ফলে শেয়ারের দাম উঠা নামা করে।
আবার দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক অবস্থার অবনতি হলে কোম্পানীর উৎপাদন, আয় ব্যায়ে তার প্রভাব পড়ে ও দেখা যায় তার শেয়ারের দাম কমে যায়।
মূলকথা হলো, একটি কোম্পানীর মৌলিক বিশ্লেষনের জন্য কোম্পানীটির বিগত ৫ থেকে ১০ বছরের রেকর্ড চুলচেরা বিশ্লেষন করতে হবে। সেই কোম্পানীর পরিচালকদের শতকরা কত পরিমান শেয়ার আছে, তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সব বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
পৃথিবীর বিখ্যাত এবং সফলতম বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একজন হল তথাকথিত “ওরাকল অফ ওমাহা”, ওয়ারেন বাফেটের ডাকনাম (Warren Buffett) যিনি তার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য সুপরিচিত এবং তিনি তার বিনিয়োগে মূলত ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস ব্যাবহার করেন। কারন তিনি কেবল দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগেই আগ্রহী এবং এ ব্যাপারে তার দর্শন খুবই স্পষ্ট এবং জনপ্রিয়।
▶️ ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস হল একটি শেয়ারের প্রকৃত বা ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণের একটি পদ্ধতি।
▶️ ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের মাধ্যমে এমন কোম্পানী অনুসন্ধান করা হয় যাদের শেয়ারের বর্তমান মূল্য তাদের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি বা কম দামে ট্রেড হচ্ছে।
▶️ এক্ষেত্রে ন্যায্য বাজার মূল্য যদি বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি হয়, তবে শেয়ারটিকে অবমূল্যায়িত বলে গণ্য করা হয় এবং শেয়ারটি ক্রয়ের সুপারিশ করা হয়। পক্ষান্তরে শেয়ারটি যদি অতিমূল্যায়িত হয় তবে তা ক্রয়ের আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।
কথায় আছে, “Information is the new currency”। অর্থাৎ বর্তমান প্রেক্ষাপটে তথ্যই সর্বাপেক্ষা মূল্যবান, আর ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের মূল ভিত্তিই হল তথ্য ও উপাত্ত। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের জন্য একজন বিনিয়োগকারীকে তার বাছাইকৃত কোম্পানীর ব্যাবসার ধরন, অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন, কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনার ধরন, ব্যাবস্থাপকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান,
মোট শেয়ারের সংখ্যা, লভ্যাংশ প্রদানের হার, মোট ঋণ, ঝুঁকি ও ঝুঁকি হ্রাসে কোম্পানীর গৃহীত পদক্ষেপসমূহ, কোম্পানীর বর্তমান লাভ-ক্ষতি ও ভবিষ্যৎ লাভ-ক্ষতির সম্ভাবনা, শেয়ার প্রতি আয়, নেট এসেট ভ্যালু, পিই রেশিও ইত্যাদি জানা খুবই জরুরী।
কারন শেয়ার ব্যাবসায় করতে হলে এসব ব্যাপারে সম্যক ধারনা থাকতে হবেই। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষনে যারা এগিয়ে থাকবে তারাই পুঁজি বাজারে ততটা ঝুকিমুক্ত থেকে লাভবান হবে। কোম্পানীর এসব গুরুত্বপূর্ন তথ্যাবলি সাধারণত ডিএসসির ওয়েবসাইট, বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও পোর্টাল, কোম্পানীর বার্ষিক রিপোর্টে অথবা কোম্পানীর সাইটগুলোতেই পাওয়া যাবে। এছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতেও তা নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।