আর্থিক বিবরণী বোঝাঃ
সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোম্পানির আর্থিক বিবরণী পড়া এবং বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সর্বসাধারণের জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন তার একটি বিস্তারিত বর্ণনা এখানে দেওয়া হলো:
১. প্রধান আর্থিক বিবরণী
- ব্যালান্স শীট: এই বিবরণীটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থার একটি সারাংশ সরবরাহ করে। এটি কোম্পানির সম্পদ, দায় এবং মূলধন সম্পর্কে ধারনা প্রদান করে।
- সম্পদ: কোম্পানির মালিকানাধীন সম্পদ (যেমন, নগদ, স্টক, সম্পত্তি, প্ল্যান্ট এবং সরঞ্জাম ইত্যাদি)।
- দায়: কোম্পানির দ্বারা বহনযোগ্য দায় বা ঋণ (যেমন, ঋণ, প্রদেয় হিসাব ইতাদি)।
- মূলধন: দায় বাদ দেয়ার পর কোম্পানির সম্পদে মালিকদের অবশিষ্ট দাবি।
- আয় বিবরণী: এই বিবরণী একটি নির্দিষ্ট সময়কালে (সাধারণত এক বছর) কোম্পানির আর্থিক কর্মক্ষমতা প্রকাশ করে। এটি কোম্পানির রাজস্ব, ব্যয় এবং পরিশেষে এর নিট আয় বা মুনাফা প্রকাশ করে।
- নগদ প্রবাহ বিবরণী: এই বিবরণী কোম্পানির পরিচালনা, বিনিয়োগ এবং অর্থায়ন কার্যক্রমের মধ্যে এবং বাইরে নগদ প্রবাহের ট্র্যাক রাখে। এটি কোম্পানির তারল্য এবং নগদ অর্থ উৎপাদনের ক্ষমতা মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে।
- মূলধনের পরিবর্তন বিবরণী: এই বিবরণী একটি নির্দিষ্ট সময়কালে কোম্পানির মূলধনের পরিবর্তন দেখায়, যার মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের অবদান, নিট আয় এবং লভ্যাংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২. আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ
- অনুপাত বিশ্লেষণ: কোম্পানির লাভজনকতা, তারল্য, দ্রাব্যতা এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করার জন্য মূল্যবান আর্থিক অনুপাত গণনা এবং বিশ্লেষণ করুন। সাধারণ অনুপাতগুলির মধ্যে রয়েছে:
- লাভজনকতা অনুপাত: মোট মুনাফা মার্জিন, নিট মুনাফা মার্জিন, ইকুইটিতে রিটার্ন (ROE), সম্পদে রিটার্ন (ROA)।
- তরলতা অনুপাত: বর্তমান অনুপাত, দ্রুত অনুপাত।
- দ্রাব্যতা অনুপাত: ঋণ-ইকুইটি অনুপাত, ঋণ-সম্পদ অনুপাত।
- দক্ষতা অনুপাত: স্টক টার্নওভার, হিসাব প্রাপ্য টার্নওভার।
- ট্রেন্ড বিশ্লেষণ: প্রবণতা এবং প্যাটার্ন চিহ্নিত করার জন্য সময়ের সাথে সাথে কোম্পানির আর্থিক কর্মক্ষমতা তুলনা করুন।
- পিয়ার তুলনা: একই খাত বা শিল্পে তার প্রতিযোগীদের সাথে কোম্পানির আর্থিক কর্মক্ষমতা তুলনা করুন।
৩. আর্থিক বিবরণী কোথায় পাওয়া যাবে
- কোম্পানির ওয়েবসাইট: বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে।
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ওয়েবসাইট: ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন সহ আর্থিক তথ্য অ্যাক্সেস সরবরাহ করে।
- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ওয়েবসাইট: বিএসইসি ওয়েবসাইটেও কিছু আর্থিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
৪. গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি
- হিসাবরক্ষণ মান: বাংলাদেশে আর্থিক বিবরণী আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং মান (আইএফআরএস) অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়।
- অডিটিং: তাদের নির্ভুলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য আর্থিক বিবরণী সাধারণত স্বাধীন অডিটরদের দ্বারা পরীক্ষিত হয়।
- আর্থিক বিবরণীর নোট: নোটগুলি হিসাবরক্ষণ নীতি, অনুমান এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করে যা প্রধান আর্থিক বিবরণীতে প্রতিফলিত হয় না।
৫. পেশাদার পরামর্শ চাওয়া
- যদি আপনি নিজে আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তাহলে কোনো যোগ্য আর্থিক উপদেষ্টা বা ইনভেস্টমেন্ট প্রফেশনালের সাথে পরামর্শের চিন্তা করতে পারেন।
- আর্থিক বিবরণী সাবধানে বিশ্লেষণ করে আপনি কোনো কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং আরও সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
ডিসক্লেইমারঃ এই তথ্যাবলী শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্যগত উদ্দেশ্যে পরিবেশিত এবং কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন, বিনিয়োগ, বা অন্যান্য পেশাদারী পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশ্যে নয়।
খেয়াল করুন: আর্থিক বাজার এবং প্রতিটি কোম্পানির কর্মক্ষমতা পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চিত হতে পারে। কোনো বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার বিনিয়োগ উদ্দেশ্য এবং ঝুঁকি সহনশীলতা বিবেচনা করুন।