দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হিসাবে পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সুসংগঠিত এবং স্বচ্ছ পুঁজিবাজার অপরিহার্য।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ জারীর মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ১৯৯৩ সালের ৮ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মূল লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, সিকিউরিটিজ মার্কেটের উন্নয়ন এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়াবলী বা আনুষাঙ্গিক বিধান প্রণয়ন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই) বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ। ২৮ এপ্রিল ১৯৫৪ সালে ডিএসই প্রতিষ্ঠিত হলেও এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (সিএসই) ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেন্ট্রাল ডিপজিটরী বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
যদিও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে প্রায় ১৯ লক্ষ বিনিয়োগকারী রয়েছে তথাপি তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং তারা যথাযথ বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। যেহেতু তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে বিশ্লেষন করতে পারেন না সেহেতু তারা গুজব, ধারণা এবং আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এর ফলে বাজারে তথ্যের অসামজ্ঞস্যতা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করে থাকে। এর ফলে বাজার কারসাজির সম্ভাবনা বহুগুনে বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাজারে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘটনা ঘটে থাকে।
সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বিনিয়োগকারীরা গুজব, সংস্কার এবং আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শুধু যে নিজেদের ভবিষ্যত বিপন্ন করে তা নয়, তাদের কার্যক্রমে পুঁজিবাজার তথা দেশের অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
বিনিয়োগ শিক্ষা ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান। সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষার ফলে আর্থিক জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাওয়া এবং সুরক্ষিত আর্থিক ভবিষ্যত গড়ে তোলার দ্বৈত সুবিধা পাওয়া যায়। বিনিয়োগ শিক্ষা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বিনিয়োগ পন্যের উপযুক্ততা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান করে তাদেরকে সঠিক বিনিযোগ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
আর্থিক বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে অসামঞ্জস্যতার ফলে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থিক বাজারে ক্রমশঃ জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদি সাধারণ জনগণ সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত না হয় তাহলে তারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হবে না এবং তারা যদি বিনিয়োগ শিক্ষা ব্যতীত বিনিয়োগ করে তাহলে তারা প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, যেখানে একক বিনিয়োগকারীরা মূলত: বাজারে সিংহভাগ বিনিয়োগ করে থাকে সেখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিএসইসি ২০১২ সালে একটি ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যেখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে এটিকে ফলপ্রসু করার জন্য স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় পাঠ্যক্রমে আর্থিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
সুতরাং, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার দিকে নজর দেয়ার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। আশা করা যায়, এতে করে পুঁজিবাজারের তথ্য অসামঞ্জস্যতা হ্রাস পাবে এবং বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সামর্থ্য হবে। যার ফলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল এবং দক্ষ হবে। বাজার কারসাজির সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
ধন্যবাদন্তেঃ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন