যে মূল্যে একটি শেয়ার স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয় তাকে শেয়ারের ফেস ভ্যালু (Face Value) বা অভিহিত মূল্য বলা হয়। অন্য কথায়, এটি মূলতঃ একটি মানদণ্ড যে মানটিতে লভ্যাংশ গণনা করা হয় (আমাদের ডিভিডেন্ড ইয়েলড সংক্রান্ত নিবন্ধটি দেখুন)।
বর্তমানে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা এবং এই ১০ টাকা মূল্যের উপরে যেকোন পরিমাণ কে প্রিমিয়াম মূল্য বলা হয়।
মার্কেট ভ্যালু হল শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য। এটি সেই দাম যা বাজারের স্টককে মূল্যায়িত করে। আরও সহজ ভাবে বললে- যে মূল্য বা দামে কোন শেয়ার বর্তমান বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি স্টক বা শেয়ার ১০০ টাকা মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হয় করে, তাহলে এটি সেই কোম্পানির শেয়ার প্রতি বাজার মূল্য বা মার্কেট ভ্যালু। একটি কোম্পানির মার্কেট ভ্যালু ট্রেডিং সময়কাল জুড়ে ক্রমাগত ওঠানামা করে যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।
তথাপি, একটি কোম্পানির মোট বাজার মূল্য, যাকে পাবলিক কোম্পানির বাজার মূলধন হিসাবেও উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির বর্তমান শেয়ারের মূল্যকে তার মোট বকেয়া শেয়ার দ্বারা গুণ করে গণনা করা হয়।
সহজ কথায়, তাত্ত্বিকভাবে একটি কোম্পানির বুক ভ্যালুর অর্থ হল কোম্পানির সম্পদের মোট মূল্য যা কোম্পানিটি লিকুইডেট হয়ে গেলে অর্থাৎ যখন কোম্পানির সমস্ত সম্পদ বিক্রি করা হয়ে যাবে এবং সমস্ত দায়-দেনা পরিশোধ করার পর শেয়ারহোল্ডাররা পাবে।
অতএব, বুক ভ্যালুকে কোম্পানির নেট মূল্য হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা কোম্পানির হিসাবের বইগুলিতে প্রতিফলিত হয়।
বুক ভ্যালু গণনা করা হয় মোট সম্পদ থেকে অস্পর্শনীয় সম্পদ (Intangible assets) যেমন- পেটেন্ট, সুনাম ইত্যাদি এবং দায় বাদ দিয়ে। যখন আপনি একটি কোম্পানির বুক ভ্যালুকে মোট বকেয়া শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করবেন, তখন আপনি শেয়ার প্রতি বুক ভ্যালু পেয়ে যাবেন।
কোন কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িত কিনা তা আপনি কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি বুক ভ্যালু ও তার বাজার মূল্যের সাথে তুলনা করে বের করতে পারবেন। সময়ের সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান বুক ভ্যালু সংবলিত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য সর্বদা পরামর্শ দেওয়া হয়।
যখন একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্মক্ষমতা আর্থিকভাবে হ্রাস পায়, তখন এটি শেয়ারের বাজার মূল্যকে (Market Price) প্রভাবিত করে। সাধারণত আমরা দেখি, পরপর লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অভিহিত মূল্যের নিচে চলে যায়।
এটি নিচে নামার আরেকটি কারণ রয়েছে; তা হল তালিকাভুক্ত শেয়ারের বাজার চাহিদা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অনেক ব্যাঙ্ক নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়, কিন্তু শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নীচে থাকে। কারণ বিনিয়োগকারীরা সেসব শেয়ার কিনতে আগ্রহী নয়।
চাহিদার অভাবেও শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে চলে যেতে পারে। আমরা এই ধরনের কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য দারুণ সুযোগ হিসেবে দেখতে পারি।
অনেক দুর্বল মৌলভিত্তিক কোম্পানি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়েছে যার অভিহিত মূল্য ১০ টাকার অনেক বেশি। কিন্তু বাস্তবে তাদের শেয়ারের মূল্য ১০ টাকার থেকেও কম হওয়া উচিত ছিল। কারণ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আইনে বলা হয়েছে যে প্রতিটি শেয়ারের কমপক্ষে ১০ টাকা অভিহিত মূল্য থাকতে হবে।
এই ধরনের কোম্পানি একটি অন্যায্য মূল্যে তালিকাভুক্তি পেতে এই সুযোগ ব্যবহার করে। কোনো শেয়ারের ন্যূনতম মূল্য থাকা উচিত নয়। কোম্পানির নেট অ্যাসেট ভ্যালু, ডিসকাউন্টেড ক্যাশ ফ্লো এবং অন্যান্য অনুপাত ভিত্তিক পদ্ধতির একটি অনন্য সমন্বয়ের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্যায়ন করা উচিত বলে আমরা মনে করি।