বীমা শব্দটি প্রায় সবারই পরিচিত একটি শব্দ। সবারই মোটামুটি এর সম্পর্কে একটি ধারণা রয়েছে। জীবন বীমা এই বীমারই একটি প্রকার। আজকের লেখায় আমরা জীবন বীমা নিয়ে আলোচনা করব।
বীমা মূলত ঝুঁকি নিরসনের একটি উপায় যার মাধ্যমে যে কেউ তার নিজের জান-মাল, সম্পত্তি, ব্যবসা এসবের নিরসন করতে পারে। আর জীবন বীমা জীবনের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য করা একটি বীমা। আসুন এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানি।
মূলত জীবনের নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয় তাকেই জীবন বীমা বলে। সহজভাবে বলতে গেলে জীবনের ঝুঁকি কমানোর জন্য যে বীমা করা হয় তাকেই জীবন বীমা বলা হয়। জীবন বীমাকে এক ধরণের চুক্তি বলা যায়। এটি বীমাকারি ও বীমা কোম্পানির মধ্যে এমন ধরণের একটি প্রতিশ্রুতি যেখানে বীমাগ্রহিতার জীবনের ঝুঁকি নিরসনের জন্য বীমা কোম্পানি দায়বদ্ধ হয়।
এই প্রতিশ্রুতিতে ব্যক্তি বীমা কোম্পানিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়মিত ভাবে অর্থ জমা দিয়ে থাকেন। এই অর্থ নির্ধারিত সময় পর বা বীমাগ্রহিতার মৃত্যু হলে একটি মোটা পরিমাণে তার মনোনীত ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনই অনিশ্চিত। যেকোন সময় অপ্রত্যাশিত, অভাবনীয় কোন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা ভালো বা খারাপ যেকোনটি হতে পারে। জীবন বীমা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার জন্য একটি নিরাপত্তার ঢাল স্বরুপ।
প্রতিটি মানুষের জন্যই তার পরিবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকেই চায় তার অবর্তমানে তার পরিবার যেন নিরাপদে থাকে। আর্থিক কষ্টে না পড়ে এবং এ কারনে জীবন বীমা একটি নিশ্চয়তা স্বরুপ। এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে যার কারনে আপনার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন পরতে পারে। যেকারনে জীবন বীমা করা উচিত। যেমনঃ
▶️ আকস্মিক কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবার আর্থিক অবনতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
▶️ শারীরিক অসুস্থতাজনিত জটিলতায় জীবন বীমা অতিরিক্ত আয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
▶️ আপনার অবর্তমানে সন্তানদের শিক্ষা ও অন্যান্য খরচ নিশ্চিত করবে জীবন বীমা।
▶️ ভবিষ্যতে সঞ্চয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
▶️ চাকরি হতে অবসরে যাওয়ার পর অবসরকালীন সময়ে আয়ের একটি উৎস হিসেবে সহায়তা করবে।
এরকম আরো অনেক দুর্ঘটনাজনিত ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য বর্তমান সময়ে জীবন বীমা একটি রক্ষা কবচের মতো। এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই আমাদের জীবন বীমা করা উচিত।
পরিবারপ্রেমী প্রতিটি মানুষই চায় তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পরিবার যেন নিরাপদে থাকে। পরিবারের প্রতি ভালবাসা থেকে তাদের নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা খুবই কার্যকরী। পরিবারের প্রতি এই ভালবাসা মমত্ববোধ থেকে আপনি জীবন বীমা করতে উদ্বদ্ধ হতেই পারেন।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন লক্ষ্য আপনাকে জীবন বীমা করতে আগ্রহী করে তুলবে। চলুন আমরা এ নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারনা নেই।
▶️ ধরুন আপনি সন্তান নিতে ইচ্ছুক, তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনাস্বরুপ জীবন বীমা বেছে নিতে পারেন।
▶️ আবার, পেশাগত জীবন শেষে অবসরকালীন জীবনের আয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে জীবন বীমা নিশ্চয়তা প্রদান করে। একারণেও চাকরিকালীন সময়েই জীবন বীমা করা উচিত।
▶️ এছাড়াও আমাদের এই অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি নিরসনের জন্য জীবন বীমা সুস্থ অবস্থায় করে রাখা উচিত। আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে যাতে পরিবার অভাবের মুখে না পরে এই নিশ্চয়তাও জীবন বীমা প্রদান করে থাকে।
▶️ যদি আপনার কোন ঋণ থেকে থাকে, কোন দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হলে আপনার করা জীবন বীমা এই ঋন পরিশোধ করবে। এই ঋনের বাড়তি বোঝা আপনার পরিবারকে বইতে হবে না।
এরকম আরো অনেক কারনে আমাদের জীবন বীমা করা উচিত।
ভবিষ্যতে কি হবে তা আমরা কেউ জানি না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সেই পরিবারের পরিণতি অনেক করুণ ও মর্মান্তিক হতে পারে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে জীবন বীমা একটি ভরসার নাম।
জীবন বীমা এক প্রকারের সঞ্চয়, যা ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক একটি নিরাপত্তা। একটি ছোট বিনিয়োগ আপনার ভবিষ্যতের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। এজন্য ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমানোর একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে জীবন বীমা। জীবনের প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।