জীবন বীমা সম্পর্কে আমরা যারা মোটামুটি পরিচিত তারা প্রায় সবাই জানি যে এটি জীবনের ঝুঁকি নিরসনের একটি হাতিয়ার স্বরুপ। এটি এমন একটি কৌশল যেখানে একটি চুক্তির দ্বারা কোনো ব্যক্তির অকাল মৃত্যু, কোনো দুর্ঘটনা, রোগ ব্যাধি, অবসরকালীন জীবনের নিরাপত্তা ইত্যাদির ঝুঁকি দূর করা যায়।
এটি বীমাকারী ও বীমা কোম্পানির মধ্যে কিছু শর্ত সাপেক্ষে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি। এই চুক্তিতে বীমাকারী নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা কোম্পানিকে প্রদান করে থাকে। এর ফলে বীমা কোম্পানি তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সকল ব্যয়ভার বহন করে।
জীবন বীমা অনেকভাবেই আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবার বা আপনার মনোনীত ব্যক্তিকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে পারে। আজকের লেখায় আমরা জীবন বীমার সুযোগ সুবিধাগুলো জানব।
অনেকেই মনে করেন জীবন বীমা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটি আপনার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত সহায়ক একটি বিষয়। যা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তেমন ভালো ধারণা নেই। চলুন আমরা জীবন বীমার সেই দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নেই!
যদি আপনার জীবন বীমা করা থাকে এবং বীমার প্রিমিয়াম চলাকালীন সময়ে আপনার মৃত্যু ঘটে তাহলে আপনার পরিবার বীমা কোম্পানির নিকট হতে এককালীন একটি মোটা পরিমান অর্থ পাবে। জীবন বীমা থেকে প্রাপ্ত এই অর্থ আয়করের আওতায় পড়ে না। অর্থাৎ বীমা হতে প্রাপ্ত অর্থের উপর কোন কর দিতে হবে না! এটি একটি করমুক্ত আয় হিসেবে গন্য হয়।
অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন, জীবন বীমা হলো একজনের বার্ষিক আয়ের সাত থেকে দশ গুনের সমান। অর্থাৎ আপনার যদি এরকম বীমা করা থাকে তাহলে আপনার আয়ের উপর যারা নির্ভরশীল তাদের আর্থিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা কম। আপনার অবর্তমানে দৈনন্দিন খরচ বা বড় কোন ব্যয় তারা এই অর্থ থেকে নির্বাহ করতে পারবেন।
কিছু বীমা কোম্পানি এমন কিছু চুক্তি অনুমোদন করে যেখানে জীবন বীমা পলিসিতে আরো কিছু চুক্তি সংযোজন বা সংশোধন করা যায়। যেমন, বীমাকৃত অর্থ বীমাকারীর মৃত্যুতে প্রদান করা হয় কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বীমাকারী যদি মারাত্মক অসুস্থ হয় তাহলে বীমা কোম্পানি তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে। অর্থাৎ জীবন বীমা অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার ব্যয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
জীবন বীমাকে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ খাত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। জীবন বীমা আপনার মৃত্যু ঝুঁকি কমায় কারণ বীমা কোম্পানি নির্দিষ্ট হারে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রিমিয়াম গ্রহণ করে আপনার নিকট হতে। কিন্তু বীমার মেয়াদপূর্তিতে আপনি জীবিত থাকেন তাহলে আপনি মোটা অংকের একটি অর্থ পাবেন এককালীন ভাবে। এই অর্থ আপনি যেকোন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য জীবন বীমাকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ খাত হিসেবে ধরা হয়।
আপনি যদি জীবন বীমা করে থাকেন তাহলে আপনি এর মেয়াদ শেষে একটি বড় অংকের টাকা পাবেন। এই টাকা আপনার অবসর জীবনের আয়ের একটি উৎস হয়ে দাঁড়াবে। এতে ভবিষ্যতে আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। এই অর্থ বাড়ির কাজে বা গাড়ি কেনা যেকোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। আর্থিক টানাপোড়ন না থাকলে চিন্তাহীনভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন। আপনার এবং আপনার পরিবারের জীবন হবে সুখ শান্তিতে পরিপূর্ণ।
ঋণগ্রস্ত অবস্থায় যদি আপনার মৃত্যু হয় তাহলে সেই ঋণ শোধের দায় গিয়ে পড়বে আপনার পরিবারের উপর। কিন্তু আপনার যদি জীবন বীমা করা থাকে তাহলে বীমা কোম্পানি আপনার ঋণ পরিশোধের সমস্ত দায় বহন করবে। আপনার করা ব্যাংক লোন, কোন মর্টগেজ বা অন্য কোন দেনা থাকলে তা বীমা কোম্পানি পরিশোধ করবে। এতে আপনার পরিবার ঋণের দায় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে পারবে।
জীবন বীমা শুধুমাত্র বিত্তবানদের জন্য নয়। আপনার আয়ের পরিমান যাই হোক না কেনো, জীবন বীমা আপনার অবর্তমানে আপনার ভালবাসার মানুষদের জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করবে। জীবন বীমা এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবে। সুতরাং প্রত্যেকের উচিত যথাসময়ে সঠিক বিবেচনার দ্বারা জীবন বীমা গ্রহন করা।