আয়কর (Income Tax) শব্দটির সাথে বর্তমানে সকলেই পরিচিত। অনেকের এর সম্পর্কে কিছুটা ধারণাও রয়েছে। আজ আমরা ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা নেব। এটি মূলত সরকারি রাজস্ব বা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস।
সাধারণ অর্থে ইনকাম ট্যাক্স বলতে গেলে আয়ের উপর ধার্য্য করকে বোঝায়। অর্থাৎ ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর সরকার কর্তৃক আরোপিত বাৎসরিক করকে ইনকাম ট্যাক্স বলা হয়।
বিশদভাবে বলতে গেলে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় সরকারি, বেসরকারি, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এর কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের উপর বিধিসম্মত নিয়মে আয়কর, অতিরিক্ত কর, বাড়তি লাভের কর, এতদসংক্রান্ত জরিমানা, সুদ বা আদায় যোগ্য অর্থকে ইনকাম ট্যাক্স বলা হয়।
এই কর রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদান করা হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, জনসেবার তহবিল, নাগরিকদের জন্য পণ্য সরবরাহ, জনসাধারনের স্বার্থে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রদত্ত বাধ্যতামূলক কর হচ্ছে আয়কর।
অনেকেই ইনকাম ট্যাক্স বলতে শুধুমাত্র ব্যক্তির আয়ের উপরে করকে বঝেন যা একটি ভুল ধারণা। ইনকাম ট্যাক্স একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের আয়ের উপর ধার্য্য করা হয়ে থাকে যা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মচারী, কর্মকর্তাদের উপর আরোপ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই করের আওতায় আলাদা আলাদাভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আসতে পারে।
যাদের উপর কর আরোপিত হয় তাদেরকে বলা হয় করদাতা। আইন অনুসারে, করদাতাগণ করের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণের জন্য বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন হয়।
ইনকাম ট্যাক্স বলতে যেহেতু আয়ের উপর ধার্য্য করকে বোঝায়। তাই যে সকল আয়ের উপর ইনকাম ট্যাক্স ধার্য্য করা হয় সেগুলোই ইনকাম ট্যাক্সের খাত হিসেবে ধরা হয়। সরকারের আয়কর অধ্যাদশ -১৯৮৪ অনুযায়ী ৭ ধরনের খাত থেকে আয়, ইনকাম ট্যাক্স এর আওতায় পড়ে। এগুলো নিম্নরুপঃ
১। বেতনাদি
২। নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ
৩। গৃহ সম্পত্তির আয়
৪। কৃষি আয়
৫। ব্যবসা বা পেশার আয়
৬। মূলধনি মুনাফা
৭। অন্যান্ন উৎস হতে আয়
এছাড়া রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নিম্নলিখিত আয়ের খাতগুলি সম্পৃক্ত হবেঃ
১।ফার্মের আয়ের অংশ
২।স্বামি, স্ত্রী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের আয়ের খাত
সরকার কর্তৃক ঘোষিত আয়সীমা যা অতিক্রম করলে আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। আয়কর আরোপযোগ্য সীমা হচ্ছেঃ
১। অর্থ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারি ফার্ম, ব্যক্তিসংঘ এবং আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০ টাকার উপরে হলে আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন
২। কোনো মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে ৩,৫০,০০০ হাজার টাকার বেশি হয়
৩। গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধাদের আয়ের সীমা ৪,২৫,০০০টাকা
৪। প্রতিবন্ধী করদাতার আয় বছরে যদি ৪,৫০,০০০ হাজার টাকার বেশি হয়
সঠিক সরকারি বিধি মেনে ট্যাক্স দেওয়াটাও দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য। বাংলাদেশের করব্যবস্থা হচ্ছে একটি ক্রমহ্রাসমান প্রগতিশীল আয়কর ব্যবস্থা। যেখানে উচ্চ-আয়ের উপার্জনকারীরা তাদের নিম্ন-আয়ের উপার্জনকারীদের তুলনায় উচ্চ হারে কর প্রদান করে থাকে। আসুন নিয়ম মেনে ট্যাক্স প্রদান করে সরকারি আয়ের উৎস সচল রাখি।