বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর কর্তৃক জনগনকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং জনগনের নিকট বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা সঞ্চয়সমূহ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরণ করে পরবর্তীতে ঝামেলামুক্ত বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় তাকে সঞ্চয়পত্র বলা হয়।
মূলত সাধারণ মানুষের জমানো অলস অর্থ দীর্ঘসময়ের জন্য ফেলে না রেখে ঝুঁকিমুক্ত প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা লাভ ও আহরিত অর্থ দ্বারা জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণ করার জন্য যে ব্যবস্থা সরকার কর্তৃক নেয়া হয় তাকেই সঞ্চয়পত্র বলে।সঞ্চয়পত্র সেভিংস সার্টিফিকেট বা সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টস নামেও পরিচিত।
সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যেমন মেয়াদ শেষে ভালো মুনাফা পাওয়া যায় তেমনি ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে দেশের জনগনের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং দেশের অর্থনীতিতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
১. পাঁচ-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
২. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
৩. পরিবার সঞ্চয়পত্র
৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র
উক্ত চার ধরনের সঞ্চয়পত্র একই রকম সুদ প্রদান করে না। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
কোনো বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন না। এটি শুধুমাত্র দেশের নাগরিকদের জন্য। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র যেকোনো নাগরিক ক্রয় করতে পারবেন। পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধু মাত্র মহিলাদের জন্য। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেবল পুরুষদের জন্য। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্র শুধু সরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য।
একজন ব্যক্তি নিজের নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকার এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। ১৮ বছর বয়সের নিচে কেউ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে না। তবে অভিভাবকের তথ্যের ভিত্তিতে নমিনী হতে পারবে। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রসেসিং ফি দিতে হয় না।
মূলত ৪ টি প্রতিষ্ঠান হতে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো হলো :-
১. বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল অফিস ( সদরঘাট এবং ময়মনসিংহ অফিস ব্যতীত)
২. শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত সকল তফসিলি ব্যাংক
৩. বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে সকল সঞ্চয় ব্যুরো অফিস
৪. ডাকঘর সমূহে
সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শুধুমাত্র জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত হয়। সঞ্চয়পত্র শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া সকল তফসিলি ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করা যাবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তফসিলি ব্যাংক কোনগুলো?
এর উত্তর হলো, যেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ - এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অফিসিয়ালি তালিকাভুক্ত ব্যাংকরূপে ঘোষিত হয়েছে। এসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্যভুক্ত। এসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সকল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মেনে চলার অঙ্গীকার করে বিধায় এসব ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা নিরাপদ।
তবে তফসিলি ব্যাংক গুলোর সব শাখায় সঞ্চয়পত্র বিক্রয় না ও হতে পারে। এজন্য নিকটস্থ ব্যাংকের শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।
বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংক গুলোর মধ্যে ১০ টি ব্যাংক ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করা যায় না। তবে সব ধরনের সঞ্চয়পত্র ব্যাংক হতে সংগ্রহ করা যায় না।
সঞ্চয়পত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়ােগ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুধুমাত্র জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরাে কর্তৃক পরিচালিত হয়। এজন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে চায় তবে ব্যাংক হতে তা ক্রয় করা যাবে না,সরাসরি সঞ্চয় ব্যুরো অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতার নামে ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে ,অন্য কারো নামে হলে চলবে না। সঞ্চয়পত্র কোনো ব্যাংকে জামানত রেখে ঋণ নেয়া যায় না। তবে এফডিআর করা থাকলে সঞ্চয়পত্র জামানত রেখে ঋণ নেয়া যাবে।