সঞ্চয়পত্র হলো মূলত জনগনের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সঞ্চয় স্কিম যা জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের জন্য সঞ্চয়পত্র একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম।
বাংলাদেশ সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। অনেকেই সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে চায় কিন্তু তা কিভাবে কোথা হতে সংগ্রহ করতে হবে তা সম্পর্কে জানে না। এ বিষয়েই আজকের আলোচনা।
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের নিকট যাওয়া একদমই ঠিক নয়।এমন অনেক প্রতারক সঞ্চয়পত্র কিনে দিবে বা বেশি সুদের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে। তাই সবার উচিৎ সশরীরে উপস্থিত থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন সারাদেশে ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র নগদ টাকা ও চেকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়।
ব্যাক্তি পর্যায়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস , বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলোতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগ শুধুমাত্র জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন "সঞ্চয় ব্যুরো" কর্তৃক পরিচালিত হয়।
যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজ বা ফরম সংগ্রহ করতে হয়। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রেও ফরম সংগ্রহ করে সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদান করে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে হয়। সঞ্চয়পত্রের ফরম নির্দিষ্ট ব্যাংক হতে সংগ্রহ করা যায়। তবে বর্তমান অনলাইনের যুগে এই ফরম অনলাইনের মাধ্যমেই ডাউনলোড করে পূরণ করা যায়। এজন্য জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে এই ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের জন্য আলাদা আলাদা ফরম রয়েছে। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের যোগ্যতা ও মুনাফা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন আপনি কোন সঞ্চয়পত্রটি কিনবেন। আবেদন ফরমগুলো যেকোনো ইস্যু অফিস থেকে সংগ্রহ করে যথাযথভাবে পূরণ করে আবার সেই ইস্যু অফিসে জমাদান করতে হবে। আবার অনলাইন থেকে পিডিএফ (PDF) ফাইল প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়মেও ভিন্নতা রয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ে ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
ব্যাক্তিপর্যায়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে আবেদন ফরমের সাথে যেসব কাগজপত্র ইস্যু অফিসে জমা দিতে হবে।
▶️ ক্রেতা ও নমীনির প্রত্যেকের দুই কপি করে পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত রঙিন ছবি।
▶️ ক্রেতা ও নমীনির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। নমীনি নাবালক হলে তার জন্মনিবন্ধনের সনদের ফটোকপি দিতে হবে।
▶️ গ্রাহকের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের MICR চেক ও MICR সাদা চেকের কপি দিতে হবে।
▶️ সঞ্চয়পত্রে যদি ১ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে হয় তবে ই-টিন সার্টিফিকেটের কপি দিতে হবে।
▶️ পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পূরণ করা প্রাপ্ত অনুতোষিক ও ভবিষ্যৎ তহবিলের সনদপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়াও পিপিও (PPO-Pension Payment Order) অথবা ইপিপিও (EPPO- Electronic Pension Payment Order) এর ফটোকপি ও দরকার হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। এগুলোর বর্ণনা সংক্ষেপে দেয়া হলো:
▶️ কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অফ ইনকরপোরেশন , ভবিষ্যত তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন , ভবিষ্যত তহবিলের ব্যাংক হিসাব বিবরণী, লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন ইত্যাদি।
▶️ ফার্মসমূহের ক্ষেত্রে আয় বিবরণীর কপি, ফার্মের নামে খোলা ব্যাংক বিবরণী ও চেকের কপি,ফার্মের মালিকের NID কপি ও ছবি।
উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট ইস্যু অফিসে জমা দিতে হবে।
মেয়াদ শেষে এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।
এছাড়াও কোনো গ্রাহক চাইলে সঞ্চয়পত্র স্থানান্তর করে নিতে পারবেন। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনে তা স্থানান্তর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য যেকোনো অফিসে নিতে পারবেন।একইভাবে অন্যান্য ব্যাংকের বেলায়ও এভাবে স্থানান্তর করা যায়।