অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড বা ATB মার্কেটে লেনদেনের নিয়মাবলী

অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (Alternative Trading Board) বা ATB হল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (DSE) দ্বারা পরিচালিত একটি পৃথক ট্রেডিং বোর্ড। অ-তালিকাভুক্ত ও তালিকাচ্যুত সিকিউরিটিজসহ করপোরেট বন্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদির লেনদেনের সুযোগ তৈরি করতে বিগত ৪ই জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখ থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে এটিবি বোর্ড চালু করা হয়েছে। এখানে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

প্রাণ এগ্রো লিমিটেড আনসিকিউরড গ্যারান্টেড বন্ড ও লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের লেনদেনের মাধ্যমে ATB বোর্ডের সূচনা করা হয়েছে। মূলত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি নিয়ে এটিবি গঠন করা হবে। বিএসইসি নতুন এই বাজারের জন্য এরই মধ্যে ১৮টি কোম্পানি চূড়ান্ত করেছে।

এ ছাড়া পাবলিক কিন্তু তালিকাভুক্ত নয় দেশে এমন কোম্পানির সংখ্যা ২ হাজার ১৭0টির বেশি। এর মধ্যে যেসব কোম্পানির মূলধন ৫ কোটি টাকার নিচে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। এমনকি ৩০ লাখ বা ৫০ লাখ টাকা মূলধনের কোম্পানিও এতে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুবিধা পাবে। এটিবির প্ল্যাটফর্মের দ্বারা এসব কোম্পানি কোন মার্চেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়াই সরাসরি ডিএসইর মাধ্যমে বা বিশেষ ক্ষেত্রে বিএসইসির নির্দেশনায় তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

এ ছাড়া ডিএসইর তালিকাভুক্ত কিন্তু লোকসানের কারণ বিলুপ্ত হয়ে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) রয়েছে, এমন কোম্পানির মধ্যে যাদের ব্যবসা সচল রয়েছে এবং নিয়মিত এজিএম অনুষ্ঠিত হয় ও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারাও এখানে সুযোগ পাবে।

এটিবি মার্কেট লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশকিছু শর্ত রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এটিবিতে লেনদেনের শর্তগুলো:

১. অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত প্রতিটি সিকিউরিটিজের দর প্রথম দুই কার্যদিবস ৪% (৪ শতাংশ) বাড়তে বা কমতে পারবে। তৃতীয় কার্যদিবসে ঐ সিকিউরিটিজের লেনদেন বন্ধ থাকবে যাতে মার্কেট প্রথম দুই দিনে শেয়ার বিতরণ করতে পারে। আর চতুর্থ কার্যদিবসে সার্কিট ব্রেকার হবে ৫% (৫ শতাংশ)।

২. ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের জন্য, কোম্পানির স্পনসর এবং পরিচালক সহ প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডাররা ট্রেডিং শুরু হওয়ার তারিখ থেকে ৩০ ট্রেডিং দিনের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডিংয়ের কমপক্ষে ১০% বিক্রয়ের জন্য অফার করতে পারবেন এবং সর্বাধিক ৪৯% পর্যন্ত সেল করতে পারবে।

৩. এই বাজারে বিনিয়োগকারী যে কোনো সময় শেয়ার কিনতে পারলেও তিন মাসের আগে বিক্রয় করতে পারবে না। বিক্রয় করলে লাভের সব টাকা বাজেয়াপ্ত করে বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে দিয়ে দিতে হবে।

৪. ওপেন এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া এটিবিতে কোন কোম্পানির সিকিউরিটিজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন মার্জিন সুবিধা পাবে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও মূল বোর্ডের “এ” ক্যাটাগরি শেয়ারের সকল সুবিধা প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ T+2 তে শেয়ার ম্যাচিউর হবে। প্রধান বন্ডের শেয়ার বিক্রি করে এটিবি এর শেয়ার ক্রয় করা যাবে। তদ্রূপ এটিবির শেয়ার বিক্রি করেও মেইন বোর্ড এর শেয়ার ঐ দিনই ক্রয় করতে পারবে অর্থাৎ আর্থিক নেটিং সুবিধা থাকবে।

নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর প্রকৃত উন্নতি প্রকাশ করা হবে। চলতি ইপিএস প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই।

এখানে উল্লেখ্য, যে কোন ধরনের বিনিয়োগকারী অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের শেয়ার ক্রয় করতে পারবে।

প্রাথমিকভাবে, ATB- তে যে সিকিউরিটিজ গুলি অন্তর্ভুক্ত  করা হবে তা হল:

* Equity Securities: একটি তালিকাচ্যুত বা ডি-লিস্টেড কোম্পানি ATB-তে তালিকাভুক্তি এবং ট্রেডিং সুবিধা পেতে পারে। মূলত, এই সিকিউরিটিজ গুলোর বেশিরভাগই DSE-এর ওভার-দ্য-কাউন্টার বা OTC বোর্ডে একই নামে ট্রেড হত। কিন্তু যেহেতু OTC বোর্ড বর্তমানে অকার্যকর তাই ATB প্ল্যাটফর্ম এসকল ইস্যুকারী এবং এদের শেয়ারহোল্ডার উভয়ের জন্যই সুবিধা জনক হবে।  

* Debt Securities: তালিকাবিহীন বা ডি-লিস্টেড ডেবট সিকিউরিটিজ বা অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজ (ABS) অথবা ইসলামিক শরিয়াহ ভিত্তিক সিকিউরিটিজ (ISBS) এর ইস্যুকারী বা প্রবর্তক ATB-তে এর সিকিউরিটিজের তালিকা ভুক্তি এবং ট্রেডিং সুবিধা পাবে।

* Open-End Mutual Fund: তালিকাবিহীন ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের অ্যাসেট ম্যানেজার ATB-তে তার ইউনিটগুলির বিক্রয় বা পুনঃক্রয় এর  সুবিধা পাবে।

* Alternative Investment: লিস্টেড নয় এমন অল্টারনেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার ATB-তে তার ইউনিটগুলি অন্তর্ভুক্ত এবং লেনদেনের সুবিধা পেতে পারেন।

এটিবিতে তালিকাভুক্তি অনেকটা সরাসরি বা ডায়রেক্ট লিস্টিংয়ের মতো। নতুন শেয়ার না ছেড়ে উদ্যোক্তার হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্তি নেয়া যাবে। শেয়ারের মূল্যও হবে বাজারভিত্তিক। আশা করা যাচ্ছে অনেক কোম্পানিই এখানে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। ফলে বাজার মূলধন ও লেনদেন বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের গুরুত্বও বেড়ে যাবে। পুঁজিবাজারে এলে কোম্পানি পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আগের চেয়ে বাড়ে, যা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতে বড় ভূমিকা রাখে।