আইপিওতে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও পুরস্কার

আইপিও-তে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও পুরস্কার

বাংলাদেশে আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা Initial Public Offering) এ বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা যায়। এটি একটি লোভনীয় বিনিয়োগ সুযোগ হতে পারে, তবে এটির সাথে কিছু ঝুঁকিও জড়িত। নিচে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইপিওতে বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং পুরস্কার (Rewards) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আইপিওতে বিনিয়োগের পুরস্কার (Rewards):

১. মূলধন বৃদ্ধির সুযোগ:
আইপিওতে শেয়ার কেনার পর শেয়ারের দাম বাজারে বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন। এটি মূলধন বৃদ্ধির (Capital Appreciation) একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ।

২. লভ্যাংশ (Dividend) পাওয়ার সম্ভাবনা:
অনেক কোম্পানি তাদের মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে। আইপিওতে বিনিয়োগ করে আপনি নিয়মিত লভ্যাংশ পেতে পারেন।

৩. দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সুযোগ:
আইপিওতে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ গঠনের একটি ভালো উপায় হতে পারে, বিশেষ করে যদি কোম্পানির ব্যবসায়িক গঠনতন্ত্র ভালো হয়।

৪. কোম্পানির মালিকানায় অংশগ্রহণ:
শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি কোম্পানির অংশীদার হয়ে যান এবং কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোট দানের অধিকার পান।

৫. প্রাথমিক পর্যায়ে কম দামে শেয়ার কেনা:
আইপিওতে শেয়ার সাধারণত বাজারের তুলনায় কম দামে অফার করা হয়, যা ভবিষ্যতে দাম বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে।

আইপিওতে বিনিয়োগের ঝুঁকি (Risks):

১. বাজার ঝুঁকি (Market Risk):
শেয়ার বাজারের অবস্থা অনিশ্চিত হতে পারে। শেয়ারের দাম বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে উঠানামা করতে পারে।

২. কোম্পানির পারফরম্যান্স ঝুঁকি:
যদি কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স ভালো না হয়, তাহলে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে এবং লভ্যাংশও কম পাওয়া যেতে পারে।

৩. তারল্যের ঝুঁকি (Liquidity Risk):
কিছু শেয়ারের বাজারে তরলতা কম থাকে, অর্থাৎ শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতা পাওয়া যায় না। এটি শেয়ারের দাম কমিয়ে দিতে পারে।

৪. অতিরিক্ত আবেদনের ঝুঁকি:
আইপিওতে অতিরিক্ত আবেদন (Over-subscription) হলে আপনার আবেদনকৃত শেয়ার কম পেতে পারেন বা কিছু ক্ষেত্রে শেয়ার না-ও পেতে পারেন।

৫. প্রাথমিক তথ্যের অভাব:
নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রায়ই পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না, যা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা তৈরি করে।

৬. নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি (Regulatory Risk):
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) এর নিয়মকানুন পরিবর্তন হলে বা কোম্পানি নিয়ম ভঙ্গ করলে শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি হতে পারে।

৭. ডিলিস্টিং ঝুঁকি:
যদি কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়ম মেনে না চলে, তাহলে তার শেয়ার ডিলিস্টিং (Delisting) হতে পারে, যা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ক্ষতিকর।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইপিওতে বিনিয়োগের কিছু উদাহরণ:

১. সফল আইপিও:

  • গ্রামীণফোন: গ্রামীণফোনের আইপিও বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল আইপিওগুলোর মধ্যে একটি। বাজারে এর শেয়ারের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা অর্জন করেছেন।
  • ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: এই কোম্পানির শেয়ারও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে।

২. ব্যর্থ আইপিও:

  • কিছু কোম্পানির আইপিও বাজারে ভালো পারফরম্যান্স করে না, এবং শেয়ারের দাম প্রাথমিক মূল্যের নিচে নেমে যায়। যেমন, কিছু নতুন বা অপরিচিত কোম্পানির শেয়ার দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন দেয়নি। যেমনঃ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সি এন্ড এ টেক্সটাইলস লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

আইপিওতে বিনিয়োগের জন্য টিপস:

১. কোম্পানির প্রসপেক্টাস পড়ুন:আইপিওর প্রসপেক্টাসে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, ব্যবসায়িক মডেল এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকে। এটি ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিন।

২. বাজার গবেষণা করুন:
শেয়ার বাজারের অবস্থা এবং কোম্পানির শিল্প খাত সম্পর্কে গবেষণা করুন।

৩. বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
আপনি কি স্বল্পমেয়াদী নাকি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চান, তা নির্ধারণ করুন।

৪. বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন:
ঝুঁকি কমাতে একাধিক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করুন (Diversification)।

৫. আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন:
যদি আপনি নতুন বিনিয়োগকারী হন, তাহলে একজন আর্থিক উপদেষ্টার সাহায্য নিন।

বাংলাদেশে আইপিওতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব, তবে এটি ঝুঁকিমুক্ত নয়। যদিও আইপিওর নতুন নিয়মে লোকসানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তারপরও  সঠিক গবেষণা, পরিকল্পনা এবং সতর্কতার মাধ্যমে আপনি আইপিও থেকে আরও লাভবান হতে পারেন। তাই নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ধীরে ধীরে এবং সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ শুরু করা উচিত।