স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব, কিন্তু কেউ কেন এটি করতে চায় তার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। একের জন্য, স্টক মার্কেট দীর্ঘমেয়াদী মূলধন বৃদ্ধির উৎস প্রদান করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে, এটি আপনাকে আপনার সঞ্চয় তৈরি করতে এবং আপনার আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। উপরন্তু, নতুন ব্যবসা এবং প্রযুক্তির এক্সপোজার পেতে স্টক মার্কেট একটি চমৎকার উপায় হতে পারে।
নিচে উল্লেখ যোগ্য কিছু কারণ দেয়া হলো:
বিনিয়োগকারীরা তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ অর্জন করতে পারেন। সম্পদ সৃষ্টি এখন এমন একটি শিল্প হয়ে উঠছে যা শেষ পর্যন্ত আপনার জীবনযাত্রায় বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা কখনোই সম্ভব নয়।
শিক্ষা থেকে বিয়ে পর্যন্ত, বাসস্থান থেকে গাড়ি পর্যন্ত আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আজ থেকে প্রতিটি পয়সা ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ তৈরি করার জন্য তিনটি সহজ ধাপ রয়েছে: অর্থ উপার্জন করা, অর্থ সঞ্চয় করা এবং অর্থ বিনিয়োগ করা।
দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য এই তিনটি পদক্ষেপ বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলা যেকোন বিনিয়োগকারীর জন্য প্রয়োজন। যত বেশি সঞ্চয়, তত বেশি বিনিয়োগ এবং ফলস্বরূপ দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ অর্জন।
বাজারের শক্ত মৌল্ভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানীগুলো নিয়িমিত নগদ লভ্যাংশ প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা করে থাকে। লভ্যাংশ আয় ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের উপর রিটার্ন তৈরির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিয়মিত লভ্যাংশ প্রাপ্তির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের নিয়মিত নগদ চাহিদা মেটাতে পারে।
বিশ্বব্যাপী অনেক পুঁজি বাজার বিশ্লেষক এবং এসেট বা পোর্টফোলিও ম্যানেজারের মতানুযায়ী, যে কোন কোম্পানির মূল্যায়ন করা যায় তাদের লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা অনুসারে।
মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়ে যদি ডিভিডেন্ড ইল্ড বেশী হয় তবে তাতে আপনার অর্থমূল্য এবং আপনার ক্রয় ক্ষমতা রক্ষা পাবে যা আপনাকে আর্থিকভাবে সবল করে তুলবে। পুঁজি বাজারে আপনার বিনিয়োগকৃত শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী মুনাফা প্রদান করবে।
অন্যান্য যে কোন ব্যবসা বা বিনিয়োগের চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে তারল্য সুবিধা অনেকাংশে বেশী। তারল্য হল পুঁজিবাজারের কেন্দ্রবিন্দু যা যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী অবদান রাখতে সহায়তা করে।
অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোনো বাধ্যবাধকতা বা কোনো আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য উচ্চস্তরের তারল্য প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা যখন প্রয়োজন তখনই শেয়ার বিক্রয় করে নগদ অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী বস্তুগত সম্পদ বা Tangible asset যেমন জমি বা ভবনের ক্ষেত্রে সাধারণত বিক্রয় করে দ্রুত নগদে রূপান্তর করার ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রয় করে দ্রুত নগদে রূপান্তরের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগের মাধ্যেমে আয়কর রিবেট পাওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে পুঁজি বাজার। তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের উল্লেখ করে একজন বিনিয়োগকারীর ট্যাক্স ফাইল নির্দিষ্ট স্তরের ট্যাক্স রেয়াত পাওয়ার জন্য কর কর্তৃপক্ষের যোগ্যতা রাখে।
আপনার করযোগ্য আয় এর ২0% বিনিয়োগ যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে, বিনিয়োগ যোগ্য আয় হতে আপনি সর্বোচ্চ ১৫% কর রেয়াত পাবেন। এছাড়াও, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানীর ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ আয়কর মুক্ত। তাই কর রেয়াত পেতে ও মূলধন বৃদ্ধির জন্যও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
দীর্ঘমেয়াদী ও লাভজনক বিনিয়োগে বৈচিত্রতার জন্য মিউচুয়াল ফান্ড বা যৌথ বিনিয়োগ স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করা খুবই উপকারী। মিউচুয়াল ফান্ড মূলতঃ একটি পৃথক আইনি সত্তা যা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ বিভিন্ন খাতে ডাইভেরসিফিকেশনের মাধ্যমে ঝুকি কমিয়ে বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে।
পশ্চিমা বিশ্বে এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও মিউচুয়াল ফান্ডের বিশাল বাজার। সেখানকার মানুষ তাদের বয়স ও উপার্জনের সাথে সংগতি রেখে তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটগুলিতে বিনিয়োগ করে থাকে।
দেশের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিতে আপনার কষ্টার্জিত অর্থের মান প্রতিনিয়ত আনুপাতিক হারে হ্রাস পাচ্ছে। গ্রোথ স্টকে বিনিয়োগ ও তার রিটার্নই পারে মুদ্রাস্ফীতিকে হারাতে যা শেষ পর্যন্ত আপনার ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ সময়ের সাথে সাথে আপনার আর্থিক স্বাধীনতাকে নষ্ট করে।
ধীর বা স্থির আয়ের সিকিউরিটিজগুলো বেশিরভাগ সময় এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপরদিকে গ্রোথ সিকিউরিটিজগুলোতে বিনিয়োগের রিটার্ন আপনার দীর্ঘমেয়াদী লাভের সম্ভাবনা বাড়ায় ও সাথে মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
পুঁজিবাজার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলিতে নিয়ন্ত্রণের অংশীদার হতে পারে। পুঁজিবাজার ব্যতীত কোম্পানীর উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য এই ধরনের উপায় খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন । কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের অংশীদারিত্বের বাইরে ভোটাধিকার বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির কৌশল এবং ক্রিয়াকলাপের উপর প্রভাব সৃষ্টি করার সুযোগ দেয়।