আপনার জমানো অর্থ ফেলে না রেখে তা থেকে মুনাফা অর্জনের অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে বিনিয়োগ। অল্প সময়ের মধ্যে এর সুবিধাগুলিকে বহুগুণ করতে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ খুব উপযুক্ত একটি বিকল্প। কিছু কৌশল অনুসরণ করে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ থেকে অধিক লাভ সম্ভব। এ কারণে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি আকর্ষণীয় একটি পন্থা। চলুন এ সম্পর্কে স্বচ্ছ একটা ধারণা নেয়া যাক!
স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ শব্দ থেকেই এর হালকা একটি ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ অল্প সময়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করাই হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ। সাধারণত স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ বলতে স্বল্পসময় অর্থাৎ তিন বছরের কম সময়ের জন্য কোন ঋণ তহবিলে বিনিয়োগ করাকে বোঝায়। কম ঝুঁকিতে, কম সময়ে দ্রুত আয় করা স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য।
স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের মেয়াদ কম হওয়ার কারনে কৌশলগত কিছু পরিকল্পনার মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। যে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত রিটার্ন পেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ উপযুক্ত একটি মাধ্যম। একই সাথে যেসব কোম্পানি দ্রুত মূলধন বৃদ্ধি করতে আগ্রহী তাদের জন্যও এটি কার্যকর একটি উপায়।
সুতরাং বলা যায় যে, স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ এমন তহবিলে বিনিয়োগ বোঝায় যা এক থেকে তিন বছরের জন্য করা হয় এবং যা থেকে কম ঝুঁকিতে ভাল আয় করা যায়। স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগে অল্প সময়ের মধ্যে তহবিল জমা করা হয়, যাতে অল্প সময়ের মধ্যে তহবিল এবং লাভ অর্জন করা যায়।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের লাভজনক স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত তহবিল বেছে নিতে পারেন। আসুন স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের কিছু ক্ষেত্র দেখা যাক।
● স্বল্পমেয়াদী আমানত:
স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের প্রথম উদাহরণ হল আমানত বা জমা। এই আমানত হলো একটি ব্যাঙ্কে অল্প সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা। এটি এক ধরণের সঞ্চয়। ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর বা ২-৩ বছর পর্যন্ত সময়ের আমানত। এই তহবিল শুধুমাত্র মেয়াদপূর্তিতে তোলা যায়। এই আমানতের সুদের হার বেশ উচ্চ হয়ে থাকে। এ কারণে এটি একটি লাভজনক স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ বিকল্প হিসেবে পরিচিত।
● সরকারি বন্ড:
স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের আরেকটি উদাহরণ হল সরকারি বন্ড। সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল এবং সুদ প্রদান নিশ্চিত করে, তাই এতে ঝুঁকির মাত্রা খুবই কম। পরিশোধিত মূলধন বেশি হতে হবে না। সরকারি বন্ড বেশ লাভজনক এবং নিরাপদ একটি বিনিয়োগ পণ্য।
সরকারি বন্ডগুলো সরকারের পক্ষ হতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন অনুমোদিত কোম্পানি ইস্যু করে থাকে। এরা বিনিয়োগকারীদের নিকট আকর্ষনীয় সুদের হার প্রস্তাব করে, এবং সরকার এর মেয়াদ শেষে মুনাফা নিশ্চিত করে। এসব কারণে সরকারি বন্ড একটি নিরাপদ স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ খাত হিসেবে পরিচিত।
● মিউচুয়াল বন্ড:
মিউচুয়াল ফান্ড হল এমন একটি বিনিয়োগ পণ্য যেখানে পেশাগত পরিচালকগণ বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ছোট ছোট সঞ্চয় সংগ্রহ করে একটি বড় তহবিল গঠন করে। পরিচালকগণ তাদের কৌশল, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ তহবিল পরিচালনা করেন।
নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তহবিলের বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা অর্জিত হয়, তা আনুপাতিক হারে ওই তহবিলের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের তাদের বিনিয়োগ পরিচালনা বা মুনাফা নিয়ে ভাবতে হয় না। মিউচুয়াল ফান্ড স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের একটি উত্তম বিকল্প কারণ এর মেয়াদ স্বল্প এবং ঝুঁকির মাত্রাও কম।
● শেয়ার:
বর্তমান সময়ে শেয়ার বাজার বিনিয়োগের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি ক্ষেত্র। শেয়ার বাজারে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী স্টক রয়েছে। যেগুলো স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায়। এসব স্টকের ঝুঁকি কম এবং বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়।
● ট্রেজরি বিল:
ট্রেজরি বিল এক ধরনের স্বল্পমেয়াদি শর্তহীন সরকারি ঋণপত্র। স্বল্পকালীন তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সরকার ট্রেজারি বিল ইস্যু করে। নিলামের মাধ্যমে এটা কেনাবেচা করা হয়। সরকার মেয়াদান্তে তার বিনিয়োগকারীকে নিঃশর্তভাবে অভিহিত মূল্য ফেরত নিশ্চিত করে।
অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ তহবিল গুলোকে স্থিতিশীল বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প সময়ে মুনাফা অর্জন ও ধীর গতিতে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ একটি উত্তম বিকল্প।
ব্যক্তিক বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী উভয়ের জন্যই এটি উপযুক্ত। বাজারে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের অনেক পণ্য রয়েছে, শুধু বিনিয়োগকারীদের তাদের প্রস্তুতিপর্বের কাজ সঠিকভাবে করতে হবে যাতে তারা এর থেকে মুনাফা অর্জন করতে সফল হয়।