সর্বজনীন পেনশন স্কিম - পর্ব ১

সর্বজনীন পেনশন স্কিম কি?


সর্বজনীন পেনশন স্কিম একটি জাতীয় স্কিম যেখানে সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন। এর ফলে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় সুরক্ষিত থাকবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম কেননা সরকারই জমাকৃত টাকার গ্যারান্টর।

কি কি স্কিম রয়েছে?


চারটি আলাদা স্কিম রয়েছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায়। এগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। প্রবাস স্কিমটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। সুরক্ষা স্কিম রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, গৃহিনী ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। আর সমতা স্কিম নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। এসকল স্কিমে মাসিক বা ত্রৈমাসিক বা বাৎসরিক হারে চাঁদা প্রদান করা যাবে।

পেনশনের বিভিন্ন স্কিমের জন্য চাঁদার হার কত?


প্রবাস স্কিমে ৭ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা; প্রগতি স্কিমে ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা এবং সুরক্ষা স্কিমে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। শুধু সমতা স্কিমে চাঁদার হার একটি, আর তা হচ্ছে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে চাঁদাদাতা ৫০০ ও সরকার ৫০০ টাকা করে দেবে। অনলাইনে কার্ড ব্যবহার করে বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় চাঁদা প্রদান করা যাবে। প্রবাসীরা চাইলে বিদেশী মুদ্রায় অনলাইনে চাঁদা প্রদান করতে পারবেন।

কিভাবে এই স্কিমের আওতায় আসা যাবে?


সর্বজনীন পেনশন স্কিম ওয়েবসাইট (https://upension.gov.bd) থেকে নিবন্ধন করে চাঁদা প্রদান করতে হবে। নিবন্ধন করতে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁদের এনআইডি নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে পারবেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি সংগ্রহ করে পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দিতে হবে।

পেনশনের চাঁদা কে ও কিভাবে পাবে?


চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন। এই টাকা চাঁদপ্রদানকারীর ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যম পাবেন।  ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। চাঁদাদাতা এবং নমিনী মেয়াদ পূর্তির পূর্বে মারা গেলে, সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ও উত্তরাধিকার সনদের ভিত্তিতে উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে জমাকৃত টাকা মুনাফাসহ তাকে/তাদেরকে প্রদান করা হবে।

মাসিক চাঁদা প্রদানে ব্যর্থ হলে কি হবে?


নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে তার পরের এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। এরপর থেকে প্রতি দিনের জন্য ১% বিলম্ব ফি যুক্ত হবে। কেউ টানা ৩ কিস্তি পরিশোধ না করলে তার অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি নিজেকে অসচ্ছল ঘোষণা করে তাহলে ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হবে না।