শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে করণীয় কি?

আমাদের ভেতর অনেকেই বিনিয়োগের আগে কোনোরকম ভাবনাচিন্তা না করেই বিনিয়োগ করে থাকেন। ফলে অনেকেই ব্যবসায় লোকসান দিতে বাধ্য হন। অথচ ইচ্ছে করলেই এর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় অনায়াসেই। নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

▶️ কোন শেয়ার কেনার আগে অবশ্যই সেটার ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিকাল এনালাইসিস করুন। সেই শেয়ারের বাজার পরিস্থিতিও বিবেচনা করুন তারপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিন। কেননা এটি বিশ্লেষনধর্মী বিনিয়োগ ক্ষেত্র। এখানে আন্দাজে বিনিয়োগের কোন সুযোগ নেই।

▶️ কোন কোম্পানীর শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে সে কোম্পানী সম্পর্কে সমস্ত খোজ খবর রাখুন। কোম্পানীটির ব্যাবসায়ীক অবস্থা, লাভ ক্ষতির হ্রাস বৃদ্ধির সার্বক্ষণিক খোজ খবর রাখুন।নিয়মিত পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো পড়ুন এবং চোখ কান খোলা রাখুন। ভূলে যাবেন না, এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাজার। এখানে আপনি লাভ করতে এসেছেন, পুঁজি খোয়াতে নয়।

▶️ ক্ষেত্র বিশেষে ক্রয়কৃত শেয়ারটির দাম পড়তে শুরু করলে অল্প লোকসানে শেয়ার ছেড়ে দিন। ঐ টাকা অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করুন। এটাকে স্টপ লস বলা হয়।

▶️ মার্কেট যখন কারেকশন হয়, ঐ সময়ে কেনার মত কিছু অর্থ হাতে রেখে ব্যাবসা করুন।

▶️ কোন শেয়ারের দাম যখন বাড়তে থাকে তখন শেয়ারটি বাই করে তারপর সেল করুন। আর দাম যখন কমতে থাকে তখন শেয়ারটি সেল করে তারপর বাই করুন। এটিই বাজারে নিটিং করার সর্বোত্তম পন্থা।

▶️ সময়ের প্রয়োজনে কৌশল পাল্টান। সব শেয়ারের ক্ষেত্রে একই কৌশল খাটে না।

▶️ সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ভূল হতেই পারে। কম ক্ষতিতে দ্রুত ভুল শুধরে নিন।

▶️ সময়ের প্রয়োজনে কৌশল পাল্টান। সব শেয়ারের ক্ষেত্রে একই কৌশল খাটে না।

▶️ কোন শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকলে বা অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকলে কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করুন। গ্যাম্বলারদের কারসাজি কিনা বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনি চেষ্টা করলে এই অস্বাভাবিকতার মধ্যেও যথেষ্ট আয় করতে পারবেন।

▶️ শেয়ার কিনার আগে ইপিএস (EPS), পিই রেশিও (P/E Ratio), শেয়ার প্রতি সম্পদ (NAV Per Share) এবং এজিএম (AGM) এর সময় এবং বিগত এক বছরের খতিয়ান দেখে নিন।

▶️ বাজার যখন আতঙ্কিত তখন শেয়ার কিনতে থাকুন। (Buy when markets are in the grip of panic)

▶️ শক্ত মৌল্ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ার কিনুন, যেটা অবমূল্যায়িত অবস্থায় আছে। (Only buy fundamentally strong stocks, which are undervalued)

▶️ প্রতিমাসে একটা নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করুন। (Invest a fixed amount each month)

▶️ প্রত্যেক ব্যাবসায়ীরই নিজস্ব কিছু নিয়ম বা ফর্মূলা থাকে। আপনার নিজস্ব নিয়মে অটল থাকুন। অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আবেগ তাড়িত হবেন না এবং কোনভাবেই অন্যকে অন্ধভাবে      অনুসরন করবেন না। প্রয়োজনে কৌশল পাল্টান। একই কৌশল সবসময় কাজে আসবে এমন কোন কথা নেই।

▶️ মার্কেট যখন খুব চাঙ্গা হয়ে উঠবে, তখন হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দিয়ে মার্কেট পতন বা কারেকশনের জন্য অপেক্ষায় থাকুন। মনে রাখবেন, এই চাঙ্গা সময়ে দড় পতনের বিষয়টি বেশীরভাগ লোকই চিন্তা করে না। এটা মানুষের স্বাভাবিক মানসিকতা।

▶️ সব সময় মার্কেট ট্রেন্ড খেয়াল করুন। কেননা নিত্য ব্যবসায়িদের জন্য এ ট্রেন্ডই লাভ ক্ষতির কারন। ট্রেন্ড এর ব্যাপারেও আপনাকে সাবধান হয়তে হবে। দেখা গেল কোন একটি শেয়ারের দাম বাড়ছে, আপনি না বুঝে হোক আর গুজবের ভিত্তিতে হোক কিনে ফেললেন, এবং এর দাম বাড়তে থাকলো। কিন্তু যেদিনই আপনার কেনা শেয়ারটি ম্যাচিউর্ড হলো, সেদিন থেকেই দাম পড়া শুরু হলো। আর এই ফাঁকে একদল শেয়ার ব্যবসায়ী ঠিকই লাভ করে বেড়িয়ে গেছে। তখন চোখে সর্ষে ফুল দেখা ছাড়া আর কোন উপায় আছে আপনার?

▶️ আপনি যদি নিয়মিত শেয়ার ব্যবসায়ী হন, তাহলে প্রতিদিন অন্ততঃ এক/দুই ঘণ্টা এর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষনে ব্যয় করুন। একজন গোয়েন্দার মত কোম্পানীর হাঁড়ির খবর নেয়ার চেষ্টা করুন।

▶️ কোন কোম্পানীর শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে কেন বাড়ছে সেটা জানার চেষ্টা করুন। অনাকাঙ্খিতভাবে কোন শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার লাগাম টেনে ধরার জন্য ইদানিং নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আপনি ঐ শেয়ার কিনে ফেললে বিএসইসির সিদ্ধান্তের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। শেয়ার কেনার সময় এটিও মাথায় রাখুন।

▶️ মার্কেট যখন চাঙ্গা হয়তে শুরু করে তখন থেকেই অল্প অল্প করে অর্থাৎ বিভিন্ন কিস্তিতে শেয়ার কিনতে থাকুন। মনে রাখবেন, একই সাথে সবগুলো শেয়ারের দাম বাড়ে না এবং সবগুলো শেয়ারের দাম একই সাথে কমেও না।

▶️ মার্কেট যখন চাঙ্গা হয়তে শুরু করে, রেকর্ড ডেট যখনই থাক, কাঙ্ক্ষিত মূল্যে পৌছালে শেয়ার ছেড়ে দিন। এরপর আবার মার্কেট কারেকশনের জন্য অপেক্ষা করুন।

▶️ কোম্পানীর ডিভিডেন্ড গ্রহন করবেন কিনা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে রেকর্ড ডেট-এর আগে দাম বৃদ্ধির চরম পর্যায়ে শেয়ার বিক্রয় করে দেওয়াই উত্তম। কিনতে চাইলে রেকর্ড ডেটের পরে কিনুন।

▶️ মার্কেটঁ ট্রেন্ড খেয়াল করুন। কেননা কিছু শেয়ারের দাম বাড়ছে আরও বাড়ার জন্য, আর কিছু শেয়ারের দাম বাড়ছে আরও কমার জন্য।

▶️ যদি শেয়ার বাজার থেকে লাভবান হয়তে চান তবে বাজারের নেতিবাচক এবং ক্ষতির দিকগুলো আগে জানুন।

▶️ পত্র-পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন থেকে সার্বিক পরিস্থিতির খবর রাখুন। ডিএসসি, সিএসসি, বিএসইসি ও সিডিবিএল এর ওয়েবসাইটগুলো প্রতিদিনই দেখুন, বিশ্লেষন করুন। এখানে প্রতিদিনই নানা নিউজ চলমান থাকে, সেগুলোও পড়ুন। মোট কথা তথ্যের দিক থেকে আপডেট থাকুন। শেয়ার বাজার তথ্য সংক্রান্ত বাজার। যার কাছে যত তথ্য আছে সে তত এগিয়ে থাকবে।